কৃষি সংবাদ প্রতিবেদক:
আজ বিশ্ব খাদ্য দিবস। ‘হাত রেখে হাতে উত্তম খাদ্য ও উন্নত আগামীর পথে’। প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বরাবরের মতো পালিত হবে বিশ্ব খাদ্য দিবস। কৃষি মন্ত্রণালয় ও জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) যৌথ উদ্যোগে বিশ্বের অন্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হচ্ছে।
মন্ত্রণালয় জানায়, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল মিলনায়তনে (খামারবাড়ি, ঢাকা) অনুষ্ঠানটি উদযাপন করা হবে। অনুষ্ঠানে খাদ্য নিরাপত্তা, পুষ্টি, কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবন, এবং টেকসই খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থার বিভিন্ন দিক নিয়ে বিশদ আলোচনা হবে।
কিন্তু এরইমধ্যে হতাশা জনক তথ্য প্রকাশ করেছে বিশ্ব ব্যাংক। সম্প্রতি তারা ‘শূন্য খাদ্য অপচয়ের পথে: বাংলাদেশে একটি টেকসই খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তোলা’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে উল্লেখ করেছে, অব্যবস্থাপনা, অসচেতনতা ও পরিবহনজনিত কারণে প্রতিবছর বাংলাদেশে উৎপাদিত খাদ্য পণ্যর মধ্যে গড়ে ৩৪ শতাংশ নষ্ট বা অপচয় হয়। যার পরিমাণ প্রায় ২ কোটি ১০ লক্ষ টন (২ কোটি ১০ লাখ টন), যা উৎপাদিত খাদ্যের একটি বড় অংশ। নষ্ট বা অপচয় হওয়া এই খাদ্যপণ্যের আর্থিক মূল্য মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৪ শতাংশ। অথচ দেশের মোট জনসংখ্যার ৩১ শতাংশ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে এবং ৬৬ শতাংশ মানুষ পুষ্টিমান সমৃদ্ধ খাবার পায় না। উৎপাদিত খাদ্যর ২৭ শতাংশই খাবার টেবিলে আসে না। সংরক্ষণে ঘাটতি, হিমাগারের স্বল্পতা ও পরিবহনজনিত সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে কৃষকরা উৎপাদিত পণ্যর ন্যয্য মূল্য পাচ্ছেন না।
বিশ্ব ব্যাংক তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, মোট আবাদ হওয়া জমির মধ্যে ২৭ শতাংশ বা ৩৪ হাজার বর্গকিলোমিটারে উৎপাদিত খাদ্য শেষ পর্যন্ত অপচয় হচ্ছে প্রতি বছরে। এ গবেষণা বলছে, বেশিরভাগ খাদ্য অপচয় হয় উৎপাদন, পরিবহন, পরিচালনা, সংরক্ষণ এবং প্রক্রিয়াজাতকরণের সময়ে। অন্যদিকে কয়েকটি ফসলের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে দেখানো হয়েছে, প্রতিবছর ২৩ শতাংশ চাল, ২৭ শতাংশ মসুর ডাল, ৩৬ শতাংশ মাছ এবং ২৯ শতাংশ আম নষ্ট বা অপচয় হয়।
এছাড়া ধানের ২৩-২৮ শতাংশ, ফসল কাটার পরে গমের সাড়ে ১৭ শতাংশ, উদ্যানজাত ফসলের মধ্যে কলার ২০ শতাংশ, আলুর ২২ শতাংশ, গাজরের ২৭ শতাংশ, টমেটোর ১০ শতাংশ অপচয় হচ্ছে। ব্যক্তি পর্যায়ে খাবার গ্রহণের সময়ে বাংলাদেশে একজন বছরে গড়ে ৮২ কেজি খাবার নষ্ট করে। খাবার নষ্ট করার এ হার যুক্তরাষ্ট্র, নেদারল্যান্ডস ও জাপানের চেয়ে বেশি।
গবেষণা তথ্য অনুযায়ী ফসল তোলার পর ৮-১৫ শতাংশ চাল এবং ২০-৪০ শতাংশ ফল ও সবজি নষ্ট হয়, যার আর্থিক মূল্য ২ দশমিক ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
এ বিষয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার জানিয়েছেন, বাংলাদেশে বছরে প্রায় দুই কোটি ১০ লাখ টন খাবার নষ্ট হয়। কৃষকের খামার থেকে শুরু করে ভোক্তার টেবিলে পৌঁছানো পর্যন্ত বিভিন্ন ধাপে এই বিপুল খাদ্য অপচয় ঘটে। সংরক্ষণ ব্যবস্থা, ন্যায্য দাম নিশ্চিতকরণ ও অবকাঠামোর ঘাটতিই এর মূল কারণ।
তিনি আরো বলেন, ফরিদা আখতার বলেন, কৃষকরা নানা ধরনের খাদ্যপণ্য উৎপাদন করলেও বাজারজাতকরণের পর্যাপ্ত সুযোগ না থাকায় অনেক সময় তা নষ্ট হয়ে যায়। ‘দুধ, ডিম, মাংস, মাছ—সবখানেই একই সমস্যা। চান্দিনায় কৃষকরা দুধ নষ্ট করে ফেলতে বাধ্য হয়েছেন, কারণ পাইকারি ক্রেতারা ন্যায্য দাম দিতে চাননি। তিনি আরো বলেন, দেশে এখনো প্রায় এক কোটি ৫৫ লাখ থেকে এক কোটি ৬০ লাখ মানুষ চরম খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। অথচ অন্যদিকে দেশের একাংশে অতিভোজন চলছে।